• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করলো কে? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের সংবর্ধনায় ভুটানের রাজার যোগদান বাংলাদেশ-ভুটান তিন সমঝোতা স্মারক সই ইফতার পার্টি না করে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করুন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশ মিশনগুলোর ভূমিকা রাখার আহ্বান সমরাস্ত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস উপজেলা নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া উন্নয়ন হয় না প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তি সন্নিবেশ করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি ব্যবহারে জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে চায় ডব্লিউএইচও পুতিনকে অভিনন্দন জানালেন শেখ হাসিনা এ বছর ফিতরার হার নির্ধারণ ২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব

দেশের স্বার্থে নীরব, বিদেশে তিনি সরব

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২৩  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দানের বিপরীতে ধার্য করা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয়কর চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩১ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

এই রায়ের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশের আলোকে তাকে (নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দানের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয়কর দিতে হবে।  

বুধবার (৩১ মে) আয়কর চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ-এ শুনানি হয়। শুনানি শেষে ড. ইউনূসের দায়ের করা তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমেই প্রমাণিত হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর ফাঁকি দিতেন। ড. ইউনূসের শুধু কর ফাঁকি নয়, তার আর্থিক অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতার অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বাংলা ইনসাইডারের হাতে এসেছে। সম্প্রতি বাংলা ইনসাইডারের এক অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর ফাঁকি, রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

মাছের তেলে মাছ ভাজা

দেশের সমস্যা নিয়ে তিনি নীরব। দেশের কোন সংকটে, উৎসবে তিনি থাকেন না। তিনি ব্যক্তি স্বার্থে বিদেশে তিনি সরব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দারিদ্র জাদুঘরে যায়নি বটে, তবে তিনি অর্থ-বিত্ত বৈভবের জাদু দেখিয়েছেন। এখন ‘সামাজিক ব্যবস্থা’ আওয়াজ তুলে বিশ্বে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন হোক না হোক তার বিত্তের প্রসার ঘটেছে। এখন শিক্ষক থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নিয়ার। কিন্তু তার এই বিত্ত যেভাবে বেড়ে ওঠা গরীবের সম্পদ লুটে। সরকারকে ঠকিয়ে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। তার নাম ড. মহাম্মদ ইউনূস। পেশাগত জীবনে অর্থনীতিবিদ হলেও নোবেল বানিয়ে নিয়েছেন শান্তিতে। অর্থনীতিবিদ কিভাবে শান্তিতে নোবেল পেলেন সেটাও ভাবার বিষয়। নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিদেশে বক্তৃতা করে পান কোটি কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, দেশ এবং জাতির জন্য তিনি কি করেছেন? জোবরা গ্রামে গবেষণা শুরু করেছিলেন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে। এক সময় এই দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষদের সাবলম্বী করে তোলার কথা বলে দারস্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবেই এরশাদ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ড. ইউনূস সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি নেন, ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে একটি আইনের মাধ্যমে এবং সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড. মহাম্মদ ইউনূসকে।  

১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ নামে একটি অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নম্বর-৪৬) জারি করে। সে সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয় মাত্র তিন কোটি টাকা মূলধন দিয়ে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল সরকারের এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল ঋণ গ্রহীতাদের। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত কোনো টাকা ছিল না।

অথচ গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবহার করেই ড. ইউনূস পেয়েছেন সবকিছু। কাগজে কলমে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক সরকার এবং ঋণ গ্রহীতা জনগণ। কিন্তু ‘অসাধারণ’ মেধায় রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ ড. ইউনূস পুরে ফেলেন তার পকেটে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস গড়ে তুলেছেন নিয়ন্ত্রণাধীর ২৮টি প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ ব্যাংক তথা সরকারের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।  

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দাতা গোষ্ঠী অনুদান এবং ঋণ দেয় গ্রামীণ ব্যাংকে। অনুদানের সব অর্থ যদি রাষ্ট্র এবং জনগণের কাছে যায় তাহলে ড. ইউনূসের লাভ কি? তাই দাতাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ)। ১৯৯২ সালের ৭ অক্টোরব ঐ ফান্ড দিয়ে একটি আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৯৯৪ সালেই ‘গ্রামীণ ফান্ড’ নামের একটি লিমিটেড কোম্পানী গঠন করা হয়। তাতে ঐ ফান্ডের ৪৯ দশমিক ১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা ছিলো শুরু থেকেই।

গ্রামীণ ব্যাংক সরকারী প্রতিষ্ঠান হলেও ড.ইউনূস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সব সিদ্ধান্ত একাই নিতেন। পরিচালনা পর্ষদ এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল, যাতে কেউ ড.ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। ড.ইউনূস এই সুযোগটি কাজে লাগান। ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় দাতা গোষ্ঠীর অনুদানের অর্থ এবং ঋণ দিয়ে সোশাল এডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) গঠন করা হবে। কিন্তু দাতারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ সরিয়ে ফেলার আপত্তি জানায়।

দাতারা সাফ সাজিয়ে দেন, এভাবে অর্থ স্থানান্তর জালিয়াতি। এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন ড.ইউনূস। ২৫ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গঠনের প্রস্তাব আনেন।  

প্রস্তাবে বলা হয় ‘গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণ ‘কোম্পানী আইন ১৯৯৪’ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভা এই প্রস্তাব অনুমোদন করে।

এটি গ্রামীণ ব্যাংকেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ কল্যাণ যে গ্রামীণ ব্যাংকেরই শাখা প্রতিষ্ঠান, তা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এর মূলধন গঠন প্রক্রিয়ায়। গ্রামীণ কল্যাণ-এ গ্রামীণ ব্যাংকের সোশাল এডভ্যান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) থেকে ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। গ্রামীন কল্যাণের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে।

মেমোরেন্ডাম আব আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের এ সদস্যের পরিচালনা পরিষেদের ২ জন সদস্য গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ড.ইউনূস গ্রামীণ কল্যানের চেয়ারম্যান হন। এরপরে গ্রামীণ কল্যাণ হয়ে ওঠে ড.ইউনূসের ‘সোনার ডিম পাঁড়া রাঁজহাস’। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:-

১.গ্রামীণ টেলিকম লি: ২. গ্রামীণ ডিন্টিবিউশন লি: ৩. গ্রামীণ শিক্ষা ৪. গ্রামীণ নিটওয়ার লি: ৫. গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ ৬. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৭. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮. গ্রামীণ সলিউশন লি: ৯. গ্রামীণ ডানোন ফুডস:লি: ১০. গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: ১১. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. গ্রামীণ ফেব্রিক্স এ্যান্ড ফ্যাশন লি: ১৩. গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন।  

অন্যদিকে, গ্রামীণ কল্যাণের আদলে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠন করা হয় আরো কিছু প্রতিষ্ঠন। এগুলো হল:-

১.গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি: ২. গ্রামীণ সল্যুশন লি: ৩. গ্রামীণ উদ্যোগ ৪. গ্রামীণ আইটেক লি: ৫. গ্রামীণ সাইবারনেট লি: ৬. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৭. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৮. টিউলিপ ডেইরী এ্যান্ড প্রোডাক্ট লি: ৯. গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি: ১০. গ্রামীণ সাইবার নেট লি: ১১. গ্রামীণ সাইবার নেট লি: ১২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. রফিক আটোভ্যান মানুফ্যাকটার লি: ১৩. গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি: ১৪. গ্রামীণ ব্যবস্থা সেবা লি: ১৫. গ্রামীণ সামগ্রী।

মজার ব্যাপার হলো গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ড গঠিত হয়। এই দু'টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়েছে তা সবই আইনত গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পর্ষদে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকলেও, ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি। কিন্তু ড. মুহম্মদ ইউনূস এখনও গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন। প্রশ্ন হলো; কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি এখনও চেয়ারম্যান? এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের নীরবতাও এক রহস্য। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেও, ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করছে তার অনুগতরাই। একারণেই তাদের নীরবতা। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রহস্যময় আচরণের কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বঞ্চিত রাষ্ট্র ও জনগণ। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এ এক অদ্ভুদ জালিয়াতি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত কোম্পানী গঠন রাষ্ট্রের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা।

গ্রামীণ টেলিকম এবং লোকসানী প্রতিষ্ঠানের রহস্য

গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠিত ২৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র গ্রামীণ টেলিকম ছাড়া আর সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী। গ্রামীণ টেলিকম দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক।

গ্রামীণ ফোনের ৩৪ দশমিক দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২২ সালে গ্রামীণ ফোন ট্যাক্স, ভ্যাট দেয়ার পর নীট মুনাফা করেছে তিন হাজার নয় কোটি ষোল লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ ফোন থেকে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর নীট মুনাফা পায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশ নয়-ছয় করা ছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের আর কোন কাজ নেই।

এই টাকা দিয়ে ড. ইউনূসের ২৮টি হায় হায় কোম্পানী প্রতিপালন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকার একটি অংশ যায় গ্রামীণ কল্যাণে। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে বাকি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো; লোকসান দিয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কেন? একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করা হয়েছে; তার সবগুলোর চেয়ারম্যান ড.ইউনূস। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয় ড.ইউনূসের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্তদের। এরা গাড়ী পান, মোটা অংকের বেতন পান এবং ড. ইউনূসের কথা অনুযায়ী কাজ করেন। এটা এক ধরনের উৎকোচ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার এক বড় কার্যক্রম হলো গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকা আত্মসাৎ করা এবং আয়কর ফাঁকি।  

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই ড.ইউনূস আসলে অর্থপাচার করেন। গ্রামীণ টেলিকমের টাকাকে হাতবদল করে করে অর্থ পাচারের পথ তৈরী করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪- এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে। যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়।

আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে ভোগ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ট ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনভাবেই গ্রামীণ টেলিকম এর লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের।

ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এই পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।

গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড.ইউনূস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড.ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%।

২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড.ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড.ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%।  

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত।  

অস্বচ্ছ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, জালিয়াতি এবং অর্থপাচার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তিনটি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিনটি হলো যথাক্রমে:- ১. সাউথ ইস্ট ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১), ২. স্ট্যান্ডার্ট চার্টড ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৮১২১২৭৪৭০১) এবং ৩. রুপালি ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০৪৮৯০১০০০৮০৯৬)।

এই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১) তার মূল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১শ’ ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩শ’ ৬৮ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিটেন্সের বেশিরভাগ ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ’ ৫২ টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। সেই সময়েই একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও প্রয়াস করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য বিদেশি বন্ধুরা ড. ইউনূসকে টাকা দিয়েছিল? বিদেশ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন ইউনূস?  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্যাক্স ফাইল বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ২০০৩ সালের পরে নোবেল বিজয়ীর তকমাধারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ট্যাক্স ফাইলে ২০০৫-০৬ কর বছরে তিনি সর্বমোট ৯৭ কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯১ টাকা রেমিটেন্স প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই সময়ে তার ব্যক্তিগত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স প্রাপ্তির পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকার রেমিটেন্স প্রাপ্তির তথ্য সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেছেন। এটি স্পষ্ট অর্থপাচারের দোষে দুষ্ট।  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ডেবিট অ্যানালাইসিসে ওঠে এসেছে, অপ্রদর্শিত অর্থ সমূহের মূল অংশ তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অন্য দু’টি অ্যাকাউন্ট, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৫ নম্বর ব্রাঞ্চের ট্র্যাভেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ নামের (অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৭৩৩০০০০০৩৩৩৯) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭শ’ ৬৭ টাকা এবং ০০৩৫ নম্বর ব্রাঞ্চের (অ্যাকাউন্ট নম্বর-৯০৩০৩১৬০৯১০) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছেন। অর্থপাচারের জন্যই এভাবে টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।  

সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর বছরে তিনি তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে নিজস্ব সাউথ ইস্ট ব্যাংকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১৫ কেটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। কিন্তু তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৮৯ টাকা।

ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ট্যাক্স বা কর ফাইলের সাথে এখানে পার্থক্য রয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫৯ টাকা। ২০০৮-০৯ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৪শ’ ১০ টাকা। অথচ তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১০ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ’ ৭৮ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৯-১০ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ১শ’ ৯৫ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা।

এখানে তিনি ১ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ৬৫ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১০-১১ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ২শ’ ৪ টাকা। অথচ তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৯২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ১শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১১-১২ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ ৮৬ টাকা। আর ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ’ ৭২ টাকা।

এখানে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১২-১৩ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৭৭ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ’ ৬৫ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৩-১৪ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩শ’ ৩৬ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ ৪৪ টাকা। এখানে তিনি ২ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৭শ’ ৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেছেন।

২০১৪-১৫ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ ৭ টাকা। অথচ ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৯৮ টাকা। এখানেও তিনি ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬শ’ ৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন।  

২০০০ সালের পর থেকে এমন প্রতিটি কর বছরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। ২০০৫-০৬ কর বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ কর বছর পর্যন্ত সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকা রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন।  

মজার ব্যাপার হলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ড. ইউনূস এর ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে প্রায় সব টাকা তুলে ‘ইউনূস ট্রাস্ট’ গঠন করেন। ট্রাস্টের টাকা আয়কর মুক্ত। সে হিসেব থেকেই এমন কান্ড করেন তিনি। কিন্তু এরকম ফান্ডের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি তিনি দেননি। এই ট্যাক্স ফাঁকির কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তিন হেরে যান। এখন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন।  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। নির্বাচন মৌসুমগুলোতে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এই রেমিটেন্সের টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, ড.মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে নির্বাচনী মৌসুমে বিদেশ থেকে বেশি অর্থ আসার উদ্দেশ্য কি? কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের জন্য কি তিনি টাকা এনেছেন?

ড. ইউনূস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য যে ট্রাস্ট গঠন করেন- তার একটি মাত্র কার্যক্রম দেখা যায়। তা হলো ড. ইউনূস এবং তার পরিবারের সব ব্যয় বহন করা হয় এই ট্রাস্টের টাকায়। এটাও এক ধরনের জালিয়াতি। এই ট্রাস্ট যে ধরনের সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম করবে বলে আঙ্গীকার করা হয়েছে তার কিছুই করে না। তাহলে কি কর ফাঁকি দিয়ে বিলাসী জীবন যাপনের জন্যই এই ট্রাস্ট?

একজন নোবেল জয়ী ব্যক্তি, কিভাবে রাষ্ট্র এবং জনগণের সংঙ্গে এ রকম প্রতারণা করতে পারেন? রাষ্ট্রের সম্পদ দিয়ে বানাতে পারেন একের পর এক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য করতে পারেন নানা ছল-চাতুরী ও প্রতারণা? এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস?