• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে দর্শনা স্থলবন্দর, পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার চেহারা

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩  

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কার্যক্রম। এরই মধ্যে বন্দর এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল, রেল ইয়ার্ড, শেড, ওয়্যার হাউজ, আবাসিকসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে চারশ বিঘা জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্ভাব্যতা যাচাই, দাগসূচি প্রণয়ন, প্রস্তাবিত দাগ মৌজা ম্যাপে চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। এতে পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সহজ হবে যোগাযোগ।

দর্শনা রেলপথ দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ১৯৬২ সাল থেকে। দর্শনায় আগে থেকেই রয়েছে কাস্টম শুল্ক স্টেশন, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি, অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বিজিবির ছয়টি ক্যাম্প। এখন শুধু এসআরও (প্রজ্ঞাপন) সংশোধন ও দু’দেশের মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা গেলেই দর্শনা-গেদে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে শুরু হবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এটি চালু হলে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট ও চাপ কমবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী সংগঠন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দর্শনা বন্দর দিয়ে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করতে এসআরও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত পত্র ভারতের দিল্লিতে পাঠান। এতে ভারতেরও আগ্রহ রয়েছে। এজন্য গত ১৩ ডিসেম্বর গেদে-দর্শনা বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন ইন্ডিয়া ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এন এন সিনহা।

এর আগে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর পরিদর্শন করেন চেয়ারম্যান কেএম তারিকুল আলম।

২০১৭ সালের ১২ জুলাই দর্শনায় আসেন তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। তখন দর্শনা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময়সভায় তিনি বলেন, দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথে দর্শনা-গেদে সীমান্তপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে স্থল শুল্ক স্টেশন দর্শনায় একটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের কার্যক্রম অচিরেই চালু হবে।

বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান রাহমাতুল মুনিমও এ বন্দর পরিদর্শন করে একই অভিমত ব্যক্ত করেন। সবশেষ ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

পরে একই বছরের ২৬-৩০ ডিসেম্বর দিল্লিতে দু’দেশের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সাব গ্রুপের সভা হয়। সেখানে দ্রুত গেদে-দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালুকরণে একমত পোষণ করে দু’দেশের চলমান কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনকে ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি ‘স্থলবন্দর’ ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য এ সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত অংশে শুধু ৮০০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করলেই দর্শনা-গেদে শুল্ক স্টেশন দিয়ে মুহূর্তেই সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬২ সাল থেকে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে দর্শনা হয়ে বাংলাদেশ-ভারতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফল, গাছ-গাছড়া, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বল ক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভুসি, ভুট্টা, বিভিন্ন ধরনের খৈল, পোলট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন ধরনের ক্লে, জিপসামসহ ৩৬টি পণ্য আমদানি হচ্ছে। তবে একসময় এ পথ দিয়ে ভারতে চিটাগুড় রপ্তানি হলেও এখন বন্ধ।

দর্শনা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির সব পদ্ধতি ডিজিটাল সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। শুল্ক স্টেশনে চালু করা হয়েছে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড। এতে দেশের যে কোনো বন্দর থেকে মুহূর্তেই দর্শনা বন্দরের আমদানি-রপ্তানির সব পণ্যের এসএম কর্ড ও মূল্য নির্ধারণ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম, টেকনাফ, মোংলা, বেনাপোল বন্দরের পর দর্শনা বন্দরে চালু হয়েছে এ সার্ভারটি।

পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, একটি অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, বিজিবির ছয়টি বিওপি ক্যাম্প সম্বলিত একটি কোম্পানি সদর। দর্শনায় রয়েছে ৪৫ বিঘা জায়গার ওপর কাস্টম শুল্ক স্টেশনের সব দপ্তর, যেখান থেকে স্থল শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আছে আধুনিকমানের কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি। এগুলোতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও রয়েছে। শতাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের অফিসের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা।

শুধু তাই নয়, স্থলপথে সংযোগের মাধ্যমে ট্রাকযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলে পরিবহন টার্মিনাল এবং বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জয়নগর চেকপোস্টের অদূরে বাংলাদেশ অংশে অধিগ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত জমি আছে। দর্শনা জয়নগরে প্রস্তাবিত বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

দর্শনা থেকে দৈনিক ৪০টি যাত্রীবাহী কোচ হাইওয়ে রোড দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করছে। চিত্রা, সুন্দরবন, বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ রেলপথে ঢাকা, রাজশাহী, সৈয়দপুরে দৈনিক যাতায়াত করছে ১০টি ট্রেন। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ চলাচল করে দশর্না-গেদে রুটে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে এ রুটে সপ্তাহে ছয় দিন চলছে ‘মৈত্রী ট্রেন’।

দর্শনার জয়নগরে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। এখান থেকে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী সড়কপথে বাংলাদেশ-ভারত ভ্রমণ করছেন।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে টেলিযোগাযোগের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল রুটটি গেছে দর্শনা সীমান্ত হয়ে। দর্শনার জয়নগর-গেদে রুট দিয়ে এ টেলিকমিউনিকেশন চালু হয়েছে।

দর্শনা স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিটন বলেন, ‘আমরা জেনেছি দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এডিবির সাসেক (সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন) প্রজেক্টের মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে দীর্ঘদিনের সুফল পেতে যাচ্ছি এটি ঠিক। জেলার ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবেন।’

দর্শনা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আতিয়ার রহমান হাবু বলেন, ‘অন্য বন্দর দিয়ে আমাদের ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে হয়। এতে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এ স্থলবন্দর চালু হলে অল্প সময়ে ও সহজে পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে। আর এটি হলে আমরা কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে পারবো।’

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন বলেন, দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। এখান দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসবেন। এতে পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যোগাযোগ সহজ হবে।

ইয়াকুব হোসেন আরও বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বেনাপোলের তুলনায় ঢাকার সঙ্গে দর্শনার ৫০ কিলোমিটার রাস্তা কম হবে। যে কারণে খরচ ও সময় অপচয় হবে না।

দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের রেভিনিউ অফিসার (আরও) মাজহারুল ইসলাম  বলেন, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। কিছুদিন আগে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। দুই দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ হলে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।