• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

উপকূলের ভেনিস হয়ে উঠতে পারে ‘কালাইয়া বন্দর’

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

বাউফল প্রতিনিধিঃ
বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী তেঁতুলিয়া নদীর অববাহিকায় বাংলাদেশের মধ্যবর্তী উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অবস্থান কালাইয়া বন্দরটির। ভৌগলিক কারনেই প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে গোড়াপত্তন হওয়া এই বন্দরের প্রাচীন কাল থেকেই রয়েছে বিশেষ বানিজ্যিক গুরুত্ত্ব। ষোড়শ শতকে এই বন্দরে আসতো ফরাসি ডাচ ইংল্যান্ড মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বনিকদের জাহাজ। কৃষি পন্য আর মিঠা পানির জন্য বিদেশি বনিকদের কাছে বিশেষ কদর ছিলো এই বন্দরটির। বর্তমানে ঢাকা চট্টগ্রাম চাঁদপুর নারায়নগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য বানিজ্যিক বন্দরগুলোর সাথে গুরুত্ত্বপূর্ন ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে এই বন্দরের ব্যবসায়ীদের।  
স্থানীয় সরকারি বেসরকারি একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কালাইয়া বন্দরে প্রতিবছর আর্থিক লেনদেনের পরিমান প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর এই বন্দর থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার ধান সংগ্রহ করে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চাল কল মালিকরা। প্রায় চার শত কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার ডালজাতীয় শষ্য বিক্রী হয় এই বন্দরে। গবাদিপশু ও মাছ বিক্রী হয় প্রায় পাঁচ শত কোটি টাকা মূল্যের। এছাড়াও এই বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় মাছ কাঠ সহ নানা পন্য।
সপ্তাহের প্রতি সোমবার বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাট বসে বন্দরে। আর এই হাটের বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য নিজেরাই বিক্রীর জন্য হাটে নিয়ে আসেন। এই বন্দরে রয়েছে পৃথক ধানের হাট গরুর হাট ছাগলের হাট ডালের হাট মরিচের হাট সুপারির হাট। রয়েছে পোশাকের বাজার মুদিমনোহরী পন্যের অসংখ্য পাইকারী আড়ৎসহ অন্তত দুই হাজার বিপনী বিতান। এখানের বরফকলগুলো থেকে বরফ সংগ্রহ করে সমুদ্রগামী অনেক মাছ ধরার ট্রলার। প্রতি সোমবার এখানে হাট বসলেও বছর জুড়েই এই বন্দরে থাকে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের পদচারনা। বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এই বন্দরে আসেন অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। এদের কেউ আসেন বাশের তৈরী কুলা ডালা মোড়া পালি খাঁচা নিয়ে। কেউ কেউ আসেন হোগল পাতায় তৈরী পাটি ছিকা নিয়ে। কেউ আসেন শামুকের খোলস থেকে তৈরী চুন নিয়ে। কেউ বা আবার আসেন গাছের চারা বিক্রী করতে আবার কেউ হরেক রকম মিঠা বিক্রী করতে। এ বাজারে এখনো দেখা মেলে হুক্কা খাওয়ার উপকরন তামাক আর রাবমিঠা বিক্রেতাদের। সব মিলিয়ে হাজার পেশার মানুষের মিলনমেলা ঘটে এই বন্দরে।
তবে নানা প্রতিবন্ধকতা আর সরকারের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি কাড়তে না পারায় বিশেষ ভূ-অর্থনৈতিক গুরুত্ত্ব থাকা এই বন্দরটি ধীরে ধীরে তাঁর গৌরব হারিয়ে ফেলছে। অথচ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বন্দরটিই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের মধ্য উপকূলের ভেনিস। বন্দরটির অবস্থান বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের হলেও এই বন্দরটিকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বানিজ্য চলে পার্শ^বর্তী উপজেলা চরফ্যাশন, লালমোহন, বেরাহানউদ্দিন, দশমিনা, দুমকী, বাখেরগঞ্জ, গলাচিপা সহ উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলোতে।
বন্দরটির অমিত সম্ভাবনা নিয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল বশার খান বলেন, পনের শতকে প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী ছিলো আজকের বাউফলে। তুলনামূলক কম দূর্যোগ প্রবন এলাকা এবং বাংলাদেশের একেবারে মধ্য উপকূলে এর অবস্থান হওয়ায় এই স্থানটির রয়েছে বিশেষ ভূ-অর্থনৈতিক গুরুত্ত্ব। পায়রা পোর্টের কাছাকাছি এতো সমৃদ্ধ আর কোনো বন্দর না থাকায় বন্দরটির গুরুত্ত্ব আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌ-পথে এই বন্দর থেকে পায়রা পোর্টের দূরত্ব মাত্র ৯৫কিলোমিটার, লেবুখালী ক্যান্টনমেন্টের দূরত্ব মাত্র ৩০কিলোমিটার। এছাড়াও বাংলাদেশের সকল নৌ বন্দরগুলোর সাথে এই বন্দরের নৌ ও সড়ক পথে যোগাযোগ এখনো বিদ্যমান, রয়েছে বিদ্যুৎ সুবিধা। সব দিক বিবেচনায় নিলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য এই জায়গাটি হচেচ্ছ একটি আদর্শ স্থান। এখানে একটি অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠলে বাংলাদেশের মধ্যবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলের কর্মহীন মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি উপকূলীয় অর্থনীতিতে ঘটবে নতুন প্রানের সঞ্চার।
এই বন্দরে আগত ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দরের অভ্যন্তরে সড়কগুলো অপ্রশস্ত। কার্গো চলাচলের আলগী নদীটি দখল এবং দূষনের কারনে দিন দিন নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে পন্য পরিবহন। নেই কোনো হিমাগার। বন্দরে আগত ব্যবসায়ীদের জণ্য নেই পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার এবং পাবলিক টয়লেট। নৌ-পথে নিরাপত্তা জোরদার করার কথাও বলেন অনেক ব্যববসায়ী। এছাড়াও এই বন্দরটির অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপশি দীর্ঘমেয়াদে এই বন্দরের উন্নয়ন এবং এই বন্দর সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করার দাবী জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
উপকূলীয় মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে গবেষনামূলক নিবন্ধ লেখক রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, দক্ষিনাঞ্চলের অবহেলিত উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে অর্থনীতির মূল ¯্রােতে টেনে তুলতে হলে এই বন্দরকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল তৈরী করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের জরুরী ভিত্তিতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম ফয়সাল আহম্মেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালাইয়া বন্দর দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বানিজ্যিক বন্দর। সরকারের সুদৃষ্টি পড়লে এই বন্দর হয়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক জোন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপকূলীয় এলাকায় যে অর্থনৈতিক জোন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তায়ন করা হলে কালাইয়া বন্দর বিবেচনায় আনা উচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটির স্যোসাল স্পেশালিষ্ট মো. কাদের খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পায়রা পোর্টের কাছাকাছি একটি ইকনোমিক জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর জন্য স্থান নির্বাচনের কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে যদি কোনো প্রস্তাবনা আসে তাহলে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটি ওই বন্দরের সম্ভাবতার বিষয়ে যাচাই করবে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালাইয়া বন্দরটি এই অঞ্চলের একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র। সরকার যদি আগামী দিনে নতুন কোনো ইকনোমিক জোন করার উদ্দোগ নেয় সে ক্ষেত্রে কালাইয়া বন্দরের সম্ভাবতার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হবে।