• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী

শীতকালে ত্বকের রোগের ইতিবৃত্ত

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮  

ত্বক মানুষের শরীরকে যেমন বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে রক্ষা করে, তেমনি মানুষের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রেও একে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ত্বকের অসুখ মানে একই সঙ্গে অসুস্থতা ও সৌন্দর্যহানি।শরীর সুস্থ থাকলেও কোনো ব্যক্তির ত্বকে ক্ষত বা দাগ তৈরি হলে তিনি অস্বস্তিতে ভোগেন। আবার ত্বক সাধারণভাবে দেখতে সুন্দর হলেও এটি যদি শরীরের ভেতরের ভাইটাল অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলেও ওই মানুষ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। তাই ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা দুটোই অত্যন্ত জরুরি।
ঋতুভেদে ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ পরিবর্তনের কারণে কখনো কখনো ত্বকে অসুখও দেখা দেয়। যেমন-আমাদের দেশে সাধারণত সারা বছরই বাতাসে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতি যথেষ্ট থাকে। কিন্তু শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়। এ কারণে ত্বকের উপরি অংশের কোষ থেকে সহজেই জলীয় অংশ শোষিত হয়ে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণে এটির স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া (বায়োলজিক্যাল অ্যাপটিভিটি) বাধাগ্রস্ত হয়।
এ সময় ত্বকে আগের থাকা কিছু রোগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে এবং কিছু কিছু নতুন রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন-

**জেরোটিক একজিমাঃ
জেরোটিক ডার্মাটাইটিস বা একজিমা অ্যাসটিয়াটোটিক ডার্মাটাইটিস, একজিমা ক্র্যাকোলি বা শীতকালীন চুলকানি নামেও পরিচিত। এটি পুরো শরীরে হতে পারে। তবে হাতে বেশি হয়। ভীষণ চুলকায়। আক্রান্ত স্থান শুষ্ক, ফাঁটা ফাঁটা ও লালচে দেখায়। তবে ফোঁসকা পড়ে না। বয়স্করা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
চিকিৎসা নির্ভর করে কারণের ওপর। কারো কারো ক্ষেত্রে সাবান ব্যবহারে হয়। সে ক্ষেত্রে সাবানের বিকল্প ব্যবহার করতে হয়। লোশনের ব্যবহার সাধারণভাবে নিষেধ করা হয়। তবে গোসলের পর পুরো শরীরে ভ্যাসলিন মাখলে দীর্ঘ সময় ত্বকে জলীয়বাষ্প আটকে থাকে বলে উপকার পাওয়া যায়। যাঁদের প্রকোপ বেশি হয় তাঁদের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহার করার দরকার হতে পারে।
ডার্মাটাইটিস
সহজভাবে বললে, ডার্মাটাইটিস হচ্ছে ত্বকের প্রদাহ। এটি বহু কারণে হতে পারে। কারণের ওপর নির্ভর করে এর লক্ষণ। সাধারণত আক্রান্ত ত্বক চুলকায়, ফুলে যায় ও লালচে বর্ণ ধারণ করে। কখনো কখনো ফোঁসকা দেখা যায়।
যেকোনো বয়সের যে কারো এ রোগ হতে পারে। বেশি হয় শিশুদের। যাঁদের ডার্মাটাইটিসের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অ্যালার্জি ও অ্যাজমায় আক্রান্তদের একজিমা হতে পারে।
অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে। কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার, ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটর ক্রিম বা লোশন ব্যবহার ও ফটোথেরাপির মাধ্যমেই চিকিৎসা বেশি দেওয়া হয়। সাধারণ সতর্কতা হিসেবে রোগীকে সুতি কাপড় পরিধান করতে হয়, হালকা গরম পানিতে গোসল করতে হয়, না চুলকাতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

**অ্যাটপিক একজিমাঃ
এটিও এক ধরনের ডার্মাটাইটিস, যাতে ত্বক চুলকায় ও লালচে হয়। চুলকানি রাতে বেশি হয়। শিশুদের বেশি হয়। তবে যেকোনো বয়সে হতে পারে। এ রোগটি সহজে সারে না। একবার সারলেও আবার হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কিছুদিন পরপর হতে দেখা যায়। অ্যাজমা ও জ্বরে যাঁরা বেশি ভোগেন, তাঁদের বেশি হয়।
এখন পর্যন্ত খুব ভালো চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা হচ্ছে মূলত ক্ষতস্থানে মেডিকেটেড ক্রিম ও অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা। সাবান ও ডিটারজেন্ট এবং যেসব বস্তুর সংস্পর্শে বেশি হয়, তা এড়িয়ে চলা। ক্ষতস্থান থেকে টিসু নিয়ে পরীক্ষা করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।

**ইরাথ্রোসিসঃ
এটি একনি বা ব্রণের মতো। এতে ক্ষতস্থান লালচে হয়ে যায়, ব্রণের মতো থাকে দীর্ঘদিন। চিকিৎসা না করা হলে দিনে দিনে প্রকোপ বাড়ে। কখনো কখনো একবার হয়ে সেরে গিয়ে আবার হয়। বেশি আক্রান্ত হয় মুখের ত্বক। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে বেশি হতে দেখা যায়। মহিলাদের বেশি হয়। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, সূর্যালোক, অ্যালকোহলে বেশি হয়।

**সোরিয়াসিসঃ
ছোঁয়াচে নয়, সাধারণত বংশগত কারণে হয়। রোগটি মূলত শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত (অটোইমিউন) অসুখ, যেখানে ত্বকের কোষের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়।
সাধারণত চুলকায়। কারো কারো ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যথাও হয়। চুলকানোর কারণে কিছু ক্ষেত্রে রক্তপাতও হয়। বেশি হয় হাঁটু, কনুই, হাত ও পায়ের পাতা, নখ, পিঠ, যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথের ভাঁজে। রোগটি যেকোনো বয়সে হতে পারে।
চিকিৎসা খুব সহজ নয়। ফটোথেরাপি ও লেজার প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া মুখে সেবনের ওষুধ হিসেবে সাইক্লোস্পোরিন, রেটিনয়েড ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।

**লাইকেন প্ল্যানাসঃ
ত্বক ও মিউকাস আবরণীর (মুখের ভেতরের ঝিল্লি) এক ধরনের প্রদাহ লাইকেন প্ল্যানাস নামে পরিচিত। ত্বকের লাইনেক প্ল্যানাসে ত্বক কিছু বেগুনি রং ধারণ করে। প্রায়ই চুলকায়। মুখের ভেতরে বা যৌনাঙ্গে হলেও কিছু ক্ষেত্রে চুলকায়, ব্যথা করে এবং ক্ষতস্থান সাদা হয়ে যায়।
এ রোগটিও শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত অসুখে হয়। এ ছাড়া আর কী কারণে হয় তা এখনো অজানা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় লাইকেন প্ল্যানাস পরবর্তী সময়ে ত্বকের ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। ওষুধ হিসেবে কর্টিকোস্টেরয়েড, রেটিনয়েড, ননস্টেরয়ডাল ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন, ফটোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

**স্ক্যাবিসঃ
এটি খোসপাঁচড়া বা সাধারণ চুলকানি নামেও পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে। সহজেই একজন থেকে অন্যজন আক্রান্ত হয়। চুলকানি রাতের দিকে বেশি হয়। পুরো ত্বকে ফোসকার মতো পড়ে। বেশি হয় আঙুলের ফাঁকে, কোমরে, কনুইয়ের ভাঁজে, স্তনের আশপাশে, যৌনাঙ্গে। শিশুদের ক্ষেত্রে মাথার চাঁদিতে, মুখে, কাঁধেও হতে দেখা যায়।

এ ছাড়া আরো অনেক ধরনের ত্বকের রোগও দেখা যায়।
আবার ত্বকের কিছু অসুখ আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য না হয়ে কসমেটিক বা প্রসাধনীর অতিরিক্ত ব্যবহারেও হয়। শীতকালে প্রসাধনী বেশি ব্যবহার করা হয় বলে এ সময় এ ধরনের চর্মরোগ বেশি দেখা দেয়। যেমন-কসমেটিক ডার্মাটাইটিস। এ ক্ষেত্রে মুখের দাগ বিশেষ করে মেলেজমা, একিনিক ডার্মাটাইসিস, পেরিঅরবিটাল ডার্মাটাইটিসসহ মুখে ছোট ছোট দানাদার চুলকানি হয় ও ত্বক লাল হয়ে যায়, ফুলে ওঠে এবং ছোপ ছোপ সাদা বা কালো দাগ মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে দেখা যায়।
শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে সব সময় তেল, মলম বা ক্রিমজাতীয় পদার্থের মাধ্যমে চামড়াকে পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেটেট বা সতেজ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাবান, ডেটল, স্যাভলন বা অন্যান্য ডিটারজেন্টজাতীয় পদার্থ ত্বকে কম লাগানো ভালো।
টার-জাতীয় অথবা অন্যান্য কিছু মেডিকেটেট শ্যাম্পু এবং বডিওয়াশ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল সরাসরি ব্যবহার করা যায়। ভালো মানের বডিলোশন ব্যবহার করা যায়। এগুলো চামড়াকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজের লোশন এক বা দুবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। যেমন স্ক্যাবিসের জন্য পারমিথ্রিন বা স্কেবিসাইডাল লোশন ব্যবহার করা যায়। সোরিয়াসিসের জন্য টার-জাতীয় শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায় এবং ট্রপিক্যাল স্টেরয়েড অথবা সেলি সাইলিক এসিড অথবা ইউরিয়াজাতীয় মলম অথবা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ট্রপিক্যাল অথবা সিস্টেসিক ওষুধ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
কসমেটিকজনিত দাগ পড়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সব মানুষের জন্য সব কিছু সমভাবে প্রযোজ্য নয়। এটি দেশি বা বিদেশি, কম দামি কী বেশি দামি সেটি কোনো মুখ্য বিষয় নয়। একটি কসমেটিক একজনের ত্বকের সঙ্গে খুব সহজেই মানানসই বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে, যা অন্যজনের ক্ষেত্রে ত্বকে রি-অ্যাকশন হতে পারে। রি-অ্যাকশন হলে ওই কসমেটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কিছু ট্রপিক্যাল বা স্থানীয়ভাবে ত্বকে ব্যবহারের জন্য খুব মাইল্ড স্টেরয়েড জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ হিসেবে এন্টিহিস্টামিন সেবন করা যেতে পারে।প্রসাধনী ব্যাবহার এর কারণে কোনো প্রকার অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন, তা না হলে ঝুকির মাত্রা বেড়ে যায়।মনে রাখা জরুরী ত্বক কে সুন্দর করতে গিয়ে সুস্থ ত্বক কে অসুস্থ করা অনুচিত।
মোঃশাকিল আহমেদ
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ
বরিশাল