• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

স্বয়ংসম্পূর্ণ ৩ বছরে,পেঁয়াজ উৎপাদন ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ৭ ডিসেম্বর ২০১৯  

  • উৎপাদন মৌসুমে বন্ধ থাকবে আমদানি
  • চাষীরা পাবেন প্রণোদনা
  • চাহিদার পুরোটাই দেশে উৎপাদন করতে চায় সরকার

সারাবছর পশুতে স্বাবলম্বী হওয়ার পর সরকার এবার পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও ভারত নির্ভরতা কাটিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী তিন বছরেই সরকার পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চায়। এ লক্ষ্যে পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকাগুলোতে আগামী বছরে আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করছে, ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারলে দেশে পেঁয়াজ সঙ্কট আর হবে না।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে দেশে পেঁয়াজের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির পর সরকার চিন্তা শুরু করে কোরবানির গরুর মতো পেঁয়াজেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে না কেন? দেশের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে একটি প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে সেখান থেকে বাংলাদেশ কিভাবে বেরিয়ে আসতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের গরুর খামারিরা যে সফলতা দেখিয়েছেন, সেটি পেঁয়াজ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সম্ভব। আমাদের চাষীদের যে সক্ষমতা আছে, সেক্ষেত্রে তারা খুব সহজেই ৩০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে চাষীদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাষীরা যখন পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে নিয়ে আসবেন, তখন যেন ভারত থেকে স্বল্প সময়ের জন্য পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখা হয়। চাষীরা যদি পেঁয়াজের দাম পান, তাহলে পরবর্তী বছর আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবেন। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যেই দেশ পেঁয়াজেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। এ লক্ষ্যে বাজারে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ যেন বৃদ্ধি পায় তা নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ-চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর, মেহেরপুর ও পাবনা এলাকায় পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়। আমরা এসব এলাকায় আগামীতে আরও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আমরা যদি ৩০ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি তাহলে দেশে আর পেঁয়াজ সঙ্কট হবে না। আমরা এ লক্ষেই পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, পেঁয়াজ-চাষীরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে যেন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। সেক্ষেত্রে আমদানি করা পেঁয়াজের তুলনায় বাজারে দেশে উৎপাদন করা পেঁয়াজের পরিমাণ বেশি থাকবে এবং তার ফলে পেঁয়াজ-চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন।

কৃষি সচিব বলেন, ‘কৃষকরা যেন তাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী হন সেজন্য আমরা প্রণোদনা দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার চায় পেঁয়াজের চাহিদার পুরোটা যেন দেশের পেঁয়াজ-চাষীরাই উৎপাদন করতে উৎসাহী হন, সে বিষয়ে উৎসাহ দিতে আগামী রবি মৌসুমে পেঁয়াজ-চাষীদের প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে দেশ। কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য এবার পেঁয়াজ উঠলে রফতানি বন্ধ করা হবে।’ দেশের এই পেঁয়াজ সঙ্কট সমাধানে ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

 

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ভারত যে হঠাৎ করে পেঁয়াজ দেয়া বন্ধ করে দেবে আমরা ভাবতেও পারিনি। তবে আমাদের আগে থেকেই অনুমান করা উচিত ছিল, আরও আগে উদ্যোগ নিলে হয়তো এমন অবস্থা হতো না। আমরা এখন চেষ্টা করছি পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পেঁয়াজের অনেকগুলো ভ্যারাইটি নিয়ে এসেছি। এসব জাত মাঠে আবাদেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি আগামী বছর আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।’

মন্ত্রী জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার ৭০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন থেকে মেটানো হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। তবে এবার আমরা পেঁয়াজের মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান। তিনি মনে করেন দেশে পেঁয়াজের যেসব নতুন জাত উদ্ভাবন হয়েছে, তা যদি নিয়মিত চাষ করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজ আমদানি করা লাগবে না।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিপণ্য প্রকৃতিনির্ভর, তাই বৃষ্টি-বন্যা কৃষি উৎপাদনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। গতবছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ভাল হয়েছিল। কিন্তু আগাম বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারেনি। পাশাপাশি হঠাৎ করে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণে দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতির দ্রুত উত্তরণ ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ এক সময় খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। কিন্তু আমরা এখন ধান, মাছসহ অধিকাংশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি উৎপাদনে সরকারের গত দশ বছরে অসামান্য সাফল্য রয়েছে। তাই কেবলমাত্র পেঁয়াজের দাম দিয়ে সরকারের সাফল্যকে বিচার করা ঠিক হবে না।

উল্লেখ্য, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হলেও বৃষ্টির কারণে ৯২৯ হেক্টর জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন পাওয়া গেছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ। তবে গত কয়েক বছরে হেক্টর প্রতি ফলন ১১ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।

সারাবছর চাষযোগ্য পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন

সাধারণত পেঁয়াজ রবিশস্য হলেও এবার সেই ধারণা ভেঙ্গে দিলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। উদ্ভাবন করেছেন সারাবছর চাষোপযোগী পেঁয়াজের জাত বারি ৫। সারাবছর চাষের উপযোগী বারি ৫ জাতের এই পেঁয়াজ উদ্ভাবন করেছে মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র। মাগুরা আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রে এই গবেষণায় তিন বছর আগে সাফল্য পেলেও, এবারই প্রথম চাষীদের মধ্যে পরীক্ষামূলক চারা বিতরণে সাফল্যের দেখা মেলে। একই সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল বারি-৪ জাত চাষেও মিলেছে সফলতা। এই জাত চাষে তিন গুণ বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, বার্ষিক ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এই পেঁয়াজ। মাগুরা অঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বারি-৪ এবং সারাবছর চাষযোগ্য বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে হেক্টর প্রতি ২৫ থেকে ২৭ টন পেঁয়াজ উৎপাদন সম্ভব। যেখানে সাধারণ পেঁয়াজে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৭ থেকে ৮ টন।

অবশ্য উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় মেহেরপুরের চাষীরা শুরু করেছেন ভারতীয় সুখসাগর পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন। এই জাতের পেঁয়াজের দীর্ঘসময় সংরক্ষণ নিয়েও গবেষণা চলছে কৃষি বিভাগে। কৃষি বিভাগ বলছে, এ জাতের পেঁয়াজে পানি বেশি থাকায় সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা চলছে।