• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রাতের গাভি দিনে হয়ে যায় ষাঁড়, কী খাচ্ছেন ভোক্তারা?

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৪  

রাতের বেলা কেনা গাভি দিনের বেলা হয়ে যাচ্ছে দেশি ষাঁড়! কম দামে গাভি কিনে তা বেশি দামে ষাঁড়ের মাংস হিসেবে ভোক্তাকে ধরিয়ে দিচ্ছেন কসাইরা। আর এভাবেই চলছে রাজধানীর মাংসের বাজার। গরুর দালাল, ব্যাপারী এবং মহাজন অর্থাৎ কসাইদের সঙ্গে কথা বলেই জেনেছে এসব তথ্য।

যদিও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।

রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে কোরবানির ঈদ ছাড়া সাধারণ সময়ে যেসব গরু বিক্রি হয় তার বেশিরভাগ ক্রেতাই কসাই। অর্থাৎ, এই হাট থেকে গরু কিনে জবাই করে বিক্রি করেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।

গাবতলীর পশুর হাটে প্রতি রাতে যেসব কসাই আসেন তারা মূলত কী ধরনের পশু কেনেন, এর মধ্যে সবই কি ষাঁড়, নাকি গাভিও আছে, মহিষের সংখ্যাই বা কেমন? রাজধানীর বিভিন্ন মাংসের দোকানে প্রতিদিন ষাঁড় গরুর মাংস হিসেবে যা বিক্রি করা হয় তার বেশিরভাগই গাভির মাংস!

এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে গাবতলীর পশুর হাটে কয়েকজন গরুর দালাল এবং ব্যাপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কসাইরা সাধারণত দুইটি ষাঁড় গরু কিনলে গাভি কেনেন চারটি। যে ষাঁড়ের দাম দুই লাখ টাকা, ঠিক একই ওজনের গাভি পাওয়া যায় ৫০ হাজার টাকা কমে।

ব্যাপারীরা জানান, সব কসাই ষাঁড়ের সঙ্গে গাভি কেনে। ২০টার মধ্যে ষাঁড় জবাই করে ৬টা, বাকি সব গাভি! এরপর তারা ষাঁড়ের মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করে। যা সারা দেশেই হয়।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, চামড়া ছাড়ানোর পর বুঝার উপায় থাকে না কোনটা ষাঁড় আর কোনটা গাভি। তখন সব ষাঁড় হয়ে যায়। কিন্তু কোন দোকানে যদি কেউ গাভির মাংস কিনতে চায়, বলবে যে তারা গাভির মাংস বিক্রি করে না। সব ষাঁড় গরু। কিন্তু যদি দেড়শ গরু থাকে তাহলে ষাঁড় আছে ৫০টা, ১০০ আছে গাভি।

এক ব্যাপারী বলেন, ‘পাঁচটা যদি গাই গরু কাটে তাইলে একটা ষাঁড় গরু কাটবো। একটা ষাঁড় গরুর রান ঝুলাইয়া রাখবো সারাদিন। এডিতে লাভ হয় বেশি।’

শুধু গাবতলী হাট নয়, দেশের সব হাট থেকেই কসাইরা এমন গাভি কিনে তা ষাঁড়ের মাংস হিসেবে বিক্রি করে থাকেন।

দালাল আর ব্যাপারীদের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে এবার কসাইদের অনুসরণ করতে হাটে আসা জুরাইনের কয়েকজন কসাই পাওয়া গেলো। তারা একের পর এক গাভি কিনছেন। কথা বলে মিললো সত্যতাও। জানা গেলো পরদিন সকালে জুরাইন বাজারে জবাই হবে এসব গাভি। এরই মধ্যে ঢাকার চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, মৌলভীবাজার, শনির আখড়ার কসাইরাও গরু কিনে তাদের গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছেন, যার বেশিরভাগই গাভি।

গত ২৩ মার্চ রাতের ঘটনা। রাত তখন চারটা। ট্রাকে তোলা হলো জুরাইনের গরুগুলো। সাড়ে চারটায় গরু তোলা শেষে গাবতলী থেকে গরুবোঝাই ট্রাকটির গন্তব্য রাজধানীর জুরাইন এলাকা। ট্রাকটিকে অনুসরণ করতে থাকে। দেখতে চায় শেষ পর্যন্ত এই মহিষ এবং গাভিগুলো কীভাবে ষাঁড়ে পরিণত হয়।

ভোর পাঁচটা ২০মিনিটে জুরাইন বাজারে ট্রাকটি আনলোড করা হয়। গাভিগুলো বাজারের ভেতরে ঢুকিয়ে বাইরে রাখা হয় ষাঁড়গুলো।

গাবতলী থেকে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি গরু কিনেন কসাইরা। এর মধ্যে কিছু থাকে ষাঁড়, ট্রাকের অধিকাংশ গাভি। যা পরে ষাঁড়ের সাথে মিশিয়ে কসাইরা বিক্রি করে থাকেন।

পরদিন মানে ২৪ তারিখ সকাল সাড়ে সাতটায় এবার হাজির ওই বাজারে। ততক্ষণে বেশিরভাগ গরু জবাই কাজ শেষ। দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা ষাঁড়, কোনটা গাভি। তখনও বাজারের ভেতরে কয়েকটি গাভি দেখা গেলো। উপায় না দেখে তাদের সহজ স্বীকারোক্তি তারা কখনও কখনও গাভি জবাই করেন।

কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেলো কোথাও বিক্রি হচ্ছে না গাভির মাংস। সবার দাবি দেশি ষাঁড়ের মাংস বিক্রি করছেন তারা। তাহলে এত গাভি গেলো কোথায়?

একপর্যায়ে গাভি কেনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলে দোকানিদের একাংশ স্বীকার করলেন, গাভীর মাংস ষাঁড় হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয় অধিকাংশ দোকানে। তাদের মতে, ক্রেতারা জানে না কোনটা কিসের মাংস, ফলে গাভিকে ষাঁড় হিসেবে চালানো হচ্ছে।

কসাইদের স্বীকারোক্তি মতে, ষাঁড়ের রান সামনে ঝুলিয়ে রেখে ভেতরে রাখা হয় গাভির মাংস। জুরাইনের বাজারে সে তথ্যের সত্যতাও মিলছে।

এরমধ্যে এক ব্যবসায়ী তো একধাপ এগিয়ে বললেন, দোকানদার কাস্টমার না ঠকাইলে ব্যবসা টিকবে না। মিথ্যা কথা কইয়া লাভ নাই যে দোকানদার সব হাজি সাব! একটা ষাঁড়ের দাম যদি হয় এক লাখ টাকা, একই ওজনের একটা গাই গরুর দাম হইব ৮৫ হাজার টাকা। এইখানেই ১৫ হাজার টাকা কম। কাস্টমার দেখতাছে সামনে ষাঁড়ের রান ঝুলতাছে, পেছনে পাঁচটা গাই গরুর মাংস বেঁচতাছে। কেউ বুঝব না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলছেন, এটি সম্পূর্ণভাবে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমন অবস্থায় অতিলোভী মানসিকতা আর বাজার ব্যবস্থাপনাকে দুষলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. তৌহিদুল হক। তার মতে, সমাজের সবখানে অধঃপতন থাকবে, নৈতিক স্খলন থাকবে। আর মাংস ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার পরিচয় দেবে -- এতোটা সরল বিশ্বাস করাটা ঠিক হবে না।

ভেড়ার মাংস খাসির মাংস হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ভোক্তাকে। বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছে এক ধরনের নৈরাজ্য, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।