• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

থ্যালাসেমিয়া কি,কারন ও এর প্রতিকার

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮  

থ্যালাসেমিয়া একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা “অ্যানিমিয়া”তে ভুগে থাকেন।
থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বেটা থ্যালাসেমিয়া। সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া ß থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়াবিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিশ্বে বেটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। আলফা থ্যালাসেমিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সর্বত্র এবং কখনও কখনও ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

♦ লক্ষণ:
অতিরিক্ত আয়রন
সংক্রমণ
অস্বাভাবিক অস্থি
প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া
অবসাদ অনুভব
দুর্বলতা
শ্বাসকষ্ট
মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
অস্বস্তি
ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (Jaundice)
মুখের হাড়ের বিকৃতি
ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি
পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া
গাঢ় রঙের প্রস্রাব
হৃৎপিণ্ডে সমস্যা

♦ কারন:
ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। বাবা অথবা মা, অথবা বাবা- মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জীন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়।এক সমীক্ষায় দেখা যায়,বাবা এবং মা উভয়ের থ্যালাসেমিয়া জীন থাকলে ভূমিষ্ট শিশুর শতকরা ২৫ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: আলফা থ্যালাসেমিয়া ও বিটা থ্যালাসেমিয়া।

- আলফা থ্যালাসেমিয়া :  এই রোগের জন্য 16 নং ক্রোমোজোমে উপস্থিত আলফা-শৃঙ্খল উৎপাদনকারী জিনের mutation বা deletion দায়ী।চারটি জিন দিয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়া শিকল তৈরি হয়। বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত চারটি জিনের মধ্যে এক বা তার অধিক ত্রুটিপূর্ণ হলে আলফা থ্যালাসেমিয়া হয়। যত বেশি জিন ত্রুটিপূর্ণ হবে তত বেশি মারাত্মক সমস্যা দেখা দিবে।যেমন :
একটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে থ্যালাসেমিয়ার কোন লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যাবে না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে তার সন্তানের মধ্যে এই রোগ ছড়াবে।
দুইটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে হালকা উপসর্গ দেখা যাবে। এই অবস্থাকে বলে আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (Alpha-thalassemia minor) অথবা আলফা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট ( Alpha-thalassemia trait).
তিনটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে এর উপসর্গগুলো মাঝারি থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করে। এই অবস্থাকে বলে হিমোগ্লোবিন এইচ ডিজিজ (Hemoglobin H Disease)।
চারটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে একে বলে আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর (Alpha thalassemia major) অথবা হাইড্রপস ফিটালিস (Hydrops fetalis)। এর ফলে প্রসবের (delivery) পূর্বে অথবা জিনের পরপর ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়।

- বিটা থ্যালাসেমিয়া: বিটা থ্যালাসেমিয়া শিকল গঠিত (Chain) হয় দুইটি জিন দিয়ে। বাবা-মা থেকে প্রাপ্ত চারটি জিনের মধ্যে এক বা তার অধিক ত্রুটিপূর্ণ হলে বিটা থ্যালাসেমিয়া হয় এক্ষেত্রে :
একটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। এই অবস্থাকে বলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর (Beta-thalassemia minor) অথবা বিটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট (Beta-thalassemia trait).
দুটি জিন ত্রুটিপূর্ণ হলে মাঝারি থেকে মারাত্মক উপসর্গ দেখা যায়। এ অবস্থাকে বলে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর ( Beta-thalassemia major) অথবা কুলিস অ্যানিমিয়া (Cooley’s anemia)। নবজাতক যেসব শিশুর এই সমস্যা থাকে তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থ্যবান থাকে। তবে জন্মের প্রথম দুই বছরের মধ্যেই এর উপসর্গ দেখা যায়।
বিশ্বের আনুমানিক ৬০-৮০ মিলিওন মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছে।থ্যালাসেমিয়া স্বল্প উন্নত দেশ যেমন নেপাল,বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বেশি দেখা যায়।আশঙ্কা করা হচ্ছে,আগামী ৫০ বছরে থ্যালাসেমিয়া অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

♦ প্রতিরোধ :
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা খুবই সম্ভব। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক বা একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক এবং একজন হিমোগ্লোবিন ই এর বাহক হয় তবে প্রতি গর্ভাবস্থায় –
এ রোগে আক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ ।
বাহক শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৫০ভাগ।
আর সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ।
স্বামী স্ত্রী দুজনের যেকোন একজন যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, তাহলে নবজাতকের থ্যালাসেমিক হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তবে নবজাতক থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে যা কোন রোগ নয়।
তাই এ রোগের বাহকদের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিক শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়। সুতরাং দেরী না করে  আজই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় এর জন্য হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস নামক পরীক্ষাটি করান এবং আপনার শিশুকে এর অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখুন । এটা মনে রাখতে হবে, যে থ্যালাসেমিয়া বাহক সে রুগী নয়। যদি না সে অন্য কোন থ্যালাসেমিয়া বাহককে বিয়ে করে তবে তার সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবে না।
তাই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সবার আহে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, বিয়ের আগে বর ও কনের রক্ত পরীক্ষা করা।

এছাড়া ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ন অর্থাৎ যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক অথবা যাদের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিক  শিশু আছে তারা গর্ভস্থ ভ্রুণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালাসেমিক শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার (গর্ভপাত) করতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়।
গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া জানার জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হবে :
- কোরিওনিক ভিলিয়াস স্যাম্পলিং (Chorionic villus sampling)
- অ্যামনিওসেনটিসিস (Amniocentesis)
- ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং (Fetal blood sampling)
তাহলে আমাদের অনাগত প্রজন্ম যাতে থ্যালাসেমিয়ার মত একটি ভয়াবহ রোগ নিয়ে না জন্মায়, তার জন্য আমাদের প্রত্যেককে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, 
থ্যালাসেমিয়া বংশগত রোগ। সক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। এটি পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে আসে।

♦ চিকিৎসা :
মাইনর থ্যালাসেমিয়াতে সাধারণত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না।থ্যালাসেমিয়া মেজরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রধান চিকিৎসা।বার বার রক্ত নেবার একটি বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া।এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে।এধরণের জটিলতা প্রতিরোধে আয়রন চিলেশন থেরাপী দেয়া হয়,অতিরিক্ত লৌহ বের করে দেবার জন্য।
অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন থ্যালাসেমিয়ার একটি কার্যকরী চিকিৎসা।!