• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী

নার্ভাস ব্রেকডাউনঃ অসুখ যখন মনের

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০১৯  

 

‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ প্রকৃতপক্ষে মেডিক্যাল টার্ম বা মানসিক অসুস্থতা নয়। কিন্তু এটি উদ্বেগ বা বিষণ্নতার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।

নার্ভাস ব্রেকডাউন বা মেন্টাল/ইমোশনাল ব্রেকডাউন হচ্ছে এমন এক অবস্থা যখন কোনো ব্যক্তি প্রবল মানসিক চাপের কারণে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। নার্ভাস ব্রেকডাউনের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগীয় সতর্কতামূলক লক্ষণ রয়েছে, কিন্তু আপনি এসব যত স্পষ্ট ভাবছেন তা তেমন নাও হতে পারে।

আজকের প্রতিবেদনে নার্ভাস ব্রেকডাউন এর কিছু লক্ষন এবং এসব ক্ষেত্রে কিছু প্রতিরোধমূলক আলোচনা তুলে ধরব।

** কীভাবে বুঝবেন নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছেঃ
নার্ভাস ব্রেকডাউন যদিও কোনো মেডিকেল টার্ম নয়, কিন্ত এর কিছু লক্ষণ দেখা যায়

১.মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটেঃ
স্বল্পমেয়াদের ক্ষেত্রে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হরমোন রিলিজ করে আপনার ব্রেইনপাওয়ার বা মস্তিষ্কশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে যা মেমোরি স্টোরেজ বা স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণাগার উন্নত করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস মনোযোগ নষ্ট করে এবং কাজের প্রকল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যারা অত্যধিক স্ট্রেস নিয়ে ড্রাইভ করে তাদের দুর্ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা থাকে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের মতে, চরম স্ট্রেসের ক্ষেত্রে অত্যধিক পরিমাণ স্ট্রেস হরমোন করটিসল মেমোরি বা স্মৃতিশক্তির ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে।

২.অতিরিক্ত ক্ষুদার্থ থাকাঃ
স্ট্রেস মস্তিষ্ককে হরমোন রিলিজে প্রণোদিত করে, যেমন- অ্যাড্রিনালাইন হরমোন, যা মাংসপেশীকে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্সের (জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন নাকি এড়িয়ে যাবেন বিষয়ক প্রতিক্রিয়া) জন্য শক্তি যোগায়। অ্যান্ড্রিনালাইনের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে করটিসল শরীরকে খাবার গ্রহণে হারানো শক্তির জায়গায় শক্তি পূরণ করতে বলে। সমস্যা হচ্ছে, এমন কোনো কারণ আপনাকে মানসিক চাপ দিচ্ছে যা শারীরিক কার্যকলাপের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তাতে আপনি মস্তিষ্ক থেকে সংকেত পেতে পারেন যে আপনার শক্তি অর্জনের জন্য কোনো কিছু খাওয়া প্রয়োজন- তখন আসলে আপনার খাওয়ার প্রয়োজন নেই। উচ্চ চর্বি এবং উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কমফোর্ট ফুড বা সান্ত্বনা খাবার মস্তিষ্কে প্লেজার কেমিক্যাল বৃদ্ধি করে আপনাকে সাময়িক ভালোবোধের অনুভূতি দেবে (যেমন- এ কারণে ভয়ানক, অপ্রীতিকর কিংবা খুব খারাপ দিনের পর আপনার মধ্যে আইসক্রিম খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে)। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জরিপে পাওয়া যায়, ৩,০০০ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ৪০ শতাংশ লোক ইমোশনাল ইটিং বা আবেগীয় ভোজন করে স্ট্রেস মোকাবেলা করে।

৩.হজমে সমস্যা ও পাকস্থলীর পীড়া হয়ঃ
পাকস্থলীর ব্যথা এবং খিঁচুনি প্রায়ক্ষেত্রে মানসিক চাপ ও উদ্বেগের শারীরিক প্রকাশ। পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফোলা, গ্যাস এবং ডায়রিয়া হতে পারে ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের উপসর্গ, যার সঙ্গে উদ্বেগের সম্পর্ক আছে, কিন্তু এসবের জন্য উদ্বেগ এককভাবে দায়ী নয়। স্ট্রেস বা মানসিক চাপের প্রতি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ার কারণে ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা আইবিএস উত্তেজিত হতে পারে, বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে এখনো গবেষণা করছেন। অ্যানজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার মতে, ‘যেকোনো জায়গায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ আইবিএস রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, যেমন- সাধারণ অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার বা উদ্বেগ ব্যাধি এবং বিষণ্নতা।’ যদি আপনার মধ্যে আইবিএস টের পান, তাহলে শারীরিক ও মানসিক মুক্তির জন্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।

৪.নাকে গন্ধ অনুভব করতে পারেনঃ 
যদি আপনার স্বাভাবিক সমস্যাবিহীন নাক মেছো গন্ধ বা অ্যাসিডিক গন্ধ অনুভব করে থাকে, তাহলে আপনার স্ট্রেসের মাত্রাকে সামঞ্জস্য বা নিয়ন্ত্রণ করার সময় হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব উইসকন-ম্যাডিসনের গবেষণায় ডিস্টার্বিং ম্যাটারিয়াল বা উদ্বেগ উদ্দীপক উপাদান (যেমন- গাড়ি দুর্ঘটনা ও যুদ্ধের ছবি বা গ্রন্থ) প্রকাশ করা হয়, এতে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা মস্তিষ্কের ভুল বোঝাবুঝির ফলে প্রতিকূল উপাদান থেকে ভ্রান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ গন্ধ অনুভব করেন। তাদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়াতে গন্ধের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, খারাপ গন্ধও উদ্বেগ বাড়াতে পারে।

৫.খারাপ কিছু হবে এমন মনে হওয়াঃ
আপনি প্রতিনিয়ত কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, কিন্তু ঠিক জানেন না কি ঘটতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে- এরকম অমূলক ভয় প্যারানয়ার অন্তর্ভুক্ত। প্রবল স্ট্রেস স্বাভাবিক উদ্বেগকে অতিক্রম করে নার্ভাস ব্রেকডাউন বা ইমোশনাল ব্রেকডাউনকে প্রণোদিত করতে পারে। চরম প্যারানয়া অনির্ণীত অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার বা উদ্বেগ ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে- বিশেষ করে, অমূলক ভয় যদি আপনার কাজ ও সামাজিক জীবনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। উদ্বেগ থেকে মুক্তি ও ভালোবোধের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন, যিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন।

নার্ভাস ব্রেকডাউন থেকে তৈরি হয় মানসিক অস্থিরতা।এটিকে মস্তিষ্কের একধরনের সমস্যাই বলা যায়। এ ধরনের অসুস্থতায় মানুষের আচার-আচরণ কথা-বার্তা চিন্তা-ভাবনায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তবে মাত্রা অনুযায়ী এর ধরন বিভিন্ন হতে পারে। যেমন হালকা মানসিক অস্থিরতা বা তীব্র মানসিক অস্থিরতা। তবে তীব্র মানসিক অস্থিরতা ধীরে ধীরে মানসিক রোগে পরিণত হতে পারে। তাই মানসিক সুস্থতা খুব প্রয়োজন।

এ সমস্যায় চিকিৎসাঃ 
মানসিক অস্থিরতা যখন বড় রূপ ধারণ করে, তখন তাকে মানসিক রোগের মধ্যেই ফেলা হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানী ওষুধ ব্যবহার করেন। কিন্তু সাধারণ মানসিক অস্থিরতা কোনো রোগ নয়। তাই খুব সহজেই আমরা এ ধরনের সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারি। এ ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কথার মাধ্যমে করা হয়। এটি একধরনের উন্নত মানের কাউন্সেলিং। এ পদ্ধতিতে সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলে মন হালকা করা যায়। অস্থির ব্যক্তির মানসিক চাপ কমে তাতে। এরপর তিনি নিজেই নিজের জীবনের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন।

কাছের মানুষও অনেক সময় সাইকোথেরাপিস্টের মতো ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বস্ত ও ভালো লাগার মানুষের সঙ্গে আমরা ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যা যেগুলোর জন্য আমরা অস্থির হই, তা শেয়ার করতে পারি। এতে মানসিক চাপ কিছুটা কমে। কখনো এখান থেকে সমাধানও বের হতে পারে। ফলে মানসিক অস্থিরতাও কমে যায়।

☞আসুন জেনে নেই মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ

১. যখনই মানসিক অস্থিরতায় ভুগবেন তখন সব রকম খারাপ বা মন্দ চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন ভালো কিছু চিন্তা করার, এমন কিছু ভাবুন যা আপনাকে মানসিক শান্তি প্রদান করতে সাহায্য করবে। দেখবেন মানসিক অস্থিরতা এক নিমেষেই আপনার মন থেকে দূর হয়ে যাবে।

২. মানসিক অস্থিরতা বোধ করার সাথে সাথে আপনার জন্য প্রথম করণীয় কাজ হবে চট করে বাইরে চলে যাওয়া। একা একা যদি ঘরের এক কোণায় চুপটি করে বসে থাকেন বা নিজেকে বদ্ধ ঘরে আটকে ফেলেন তাহলে আপনার মানসিক অস্থিরতা বাড়বে। তাই মন কেমন করলে বা বুক ধরফর করলে একবার বাইরে থেকে বেড়িয়ে আসুন। আপনার মনের অস্থিরতা অনেকখানি কমে যাবে।


৩. যেকোন কিছু থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের কোন বিকল্প হয়না। আপনার মানসিক অস্থিরতা কমাতেও তাই ঘুম খুব কাজের একটি উপায় হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। যখনই আপনি মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভুগতে থাকেন তখন চেষ্টা করুন একটা ভালো ঘুম দিতে। একবার যদি আপনি একটা লম্বা ঘুম দিতে পারেন তাহলে দেখবেন অস্থিরতা আর আপনাকে ভোগাবে না।

৪. মানসিক অস্থিরতা কমানোর আরও একটি সহজ ও সুন্দর উপায় হল নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করা। হতে পারে সেটা গান শোনা বা প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলা। এক কথায় আপনার যা করতে ভালোলাগে তাই করুন। আপনার ভালোলাগার কাজগুলো করতে করতে দেখবেন অস্থিরতা কখন স্থিরতায় রূপান্তরিত হয়েছে।

৫. মানসিক অস্থিরতা কমাতে আপনি মেডিটেশন করতে পারেন। আবার চাইলে ব্যায়াম করতেও পারেন। অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতা থেকেও মানসিক অস্থিরতা হতে দেখা যায়। তাই আপনার খাবার রুটিনের প্রতি খেয়াল রাখুন। এতে পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।

৬. মনের অস্থিরতা কমাতে ফেলে আসা জীবনের কিছু ভালো স্মৃতি মনে করুন অর্থাৎ আপনার সুসময় নিয়ে ভাবুন। দেখবেন মনের অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসবে।

৭. উল্টো দিক থেকে সংখ্যা গুনুন। যেমন ১০০, ৯৯, ৯৮ এভাবে। গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন মানসিক উত্তেজনায় এই পদ্ধতি বেশ কাজের। আপনিও তাই শুরু করে দিন।

৮. ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও গান শোনা, গল্পের বই পড়া, কবিতা পড়া, বাগানে সময় কাটানো—এমন ধরনের নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করুন। কাজগুলো মনটাকে অন্য দিকে সরিয়ে দিয়ে অস্থিরতা কাটাতে সাহায্য করবে।