• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে

শৃঙ্খল ভেঙে জলের শিশুরা শিখছে ডাঙায়

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯  

জন্ম, বেড়ে ওঠা সবকিছুই নৌকায়। জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে মৃত্যুও নৌকায়। তাই নৌকাকেন্দ্রিক জীবনযাপন।

ভাসমান এ জনগোষ্ঠীর কাছে শিক্ষা যেন আকাশের চাঁদ। শিক্ষার আলো গায়ে মাখতে উঠতে হবে ডাঙায়। কিন্তু বংশপরম্পরায় পানিতে ভাসছে তারা। বাবা-মায়ের সঙ্গে জীবিকার তাগিদে নদ-নদীতে মাছ ধরে শৈশব-কৈশোর কাটে।

প্রায় তিন যুগের সেই শৃঙ্খল ভেঙে ডাঙায় উঠেছে দুই ভাই। তারা পড়ছে প্রাথমিক স্কুলে। তাদের সময় কাটছে সহপাঠীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোর করে। এই শৃঙ্খল ভেঙেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুর্গম চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মান্তা সম্প্রদায়ের দুই শিশু। তাদের একজন আবুল কালাম আজাদ (১২)। পড়ছে চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে। তারই ছোট ভাই আব্বাস হোসেন (৮)। সেও ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

ইউনিয়নের স্লুইসের খালে ভাসমান মান্তা পল্লীতে তারা থাকছে। সেখানে চার শতাধিক মুসলিম ধর্মাবলম্বী মান্তার বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ১০০ শিশু রয়েছে। এরা সবাই নৌকায় বাস করেন। আর নদ-নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে স্লুইসের খালের ভাসমান মান্তা পল্লীতে গিয়ে ওই দুই শিশুর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় নৌকায় বসে বইয়ে মনোযোগে থাকা আবুল কালাম আজাদ বলে, ‘আমাগো ভিত্তে (ভেতরে) যারা স্কুলে যায় না হেগো লগে তড়ের (ডাঙার) মানুষ কেউ মেশে না। কথাও কয় না। আমরা যারা স্কুলে যাই হেগো লগে এহন (এখন) সবাই মেশে, কথা কয়। স্কুলের সময় ছাড়া আমরা এখনও নদীতে মাছ ধরতে যাই।’

তার পাশে বই হাতে নিয়ে বসে থাকা ছোট ভাই আব্বাস হোসেন বলে, ‘ডিঙিতে দুই ভাই লেহিপড়ি (লিখিপড়ি)। ঘণ্টা দেলে ইস্কুলে যাই।’

এই দুই শিশুর মা জহুরা বেগম বলেন, ‘আমরা পড়াল্যাহা জানি না। স্বাক্ষর জানি না, টিপসই দেই। কিন্তু আমাগো পোলাপান এহন স্কুলে যায়। এইয়া ভাবতেই নিজের কাছে ভালো লাগে।’

শুধু এই দুই ভাই নয়, মান্তা পল্লী ঘুরে তাদের মতো দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা (১১) ও একই শ্রেণির পারভীন (৯) বংশপরম্পরার শৃঙ্খল ভেঙে স্কুলে যায়।

এ প্রতিবেদক মান্তা পল্লীতে গেলে শুরু থেকেই কায়েম আকবর নামের ৯ বছর বয়সের এক মান্তা শিশু তার সঙ্গে ছিল। প্রতিবেদককে সে নৌকায় করে পল্লী ঘুরিয়েছে। নৌকায় নৌকায় গিয়ে যখন বক্তব্য ও তথ্য নেয়া শেষে প্রতিবেদক ফেরার পথে কায়েম আকবর নামের ওই শিশু তার কাছে একটি আবদার করে।

কায়েম আকবর বলে, ‘আমিও ওদের মত স্কুলে যামু। ভাইয়া আমারে একটু স্কুলে ভর্তি করাই দ্যান। আমি ল্যাহাপড়া করমু।’

জানা গেছে, ডাঙার মানুষদের সঙ্গে মিশে ৭-৮টি মান্তা পরিবারে মধ্যে সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে। ওই পরিবারগুলো সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার চিন্তায় স্কুলমুখী করেছেন। আর বাকি পরিবারগুলোর মধ্যে এখনও শিক্ষার আলো পৌঁছেনি। কেবল সচেতনতার অভাবে তারা এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

সচেতন মান্তা সম্প্রদায়ের কয়েকজন জানান, আমাদের মধ্যে শিক্ষার আলো নেই। কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করতে চাই। এ জন্য নদীর কাছাকাছি ডাঙায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে। আর আমরাও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারব।

চরমোন্তাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকিয়া আক্তার  বলেন, ‘আমাদের স্কুলে কয়েকজন মান্তা সম্প্রদায়ের শিশু পড়ালেখা করে। ওরা অন্য শিশুদের মতই পড়ালেখা করে। কোনো ধরনের সমস্যা হয় না। অন্যদের মতোই পড়ালেখায় ওদের ভালো মনোযোগ আছে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগীর বলেন, ‘মান্তা শিশুদের স্কুলে ভর্তির জন্য শিক্ষকরা অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তারা পড়ালেখা করছে। বাকি শিশুদেরও ভর্তি করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে এখনও সভ্যতার ছোয়া লাগেনি। কিছু শিশু স্কুলে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে যাচ্ছে না। তাদেরকে পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি করে দেয়ার ব্যবস্থা করব। এ জন্য সবার আগে জল থেকে তাদেরকে স্থলে আনতে হবে। তাই কিছুদিন আগে আমি মান্তা সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে গিয়ে কথা বলেছি। যারা তাদের সন্তানদের শতভাগ বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করে হলফনামা দেবে, আমি তাদেরকে সরকারের তরফ থেকে থাকার জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেব। যেহেতু তারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তাই তাদের নদীর পাশেই জায়গার ব্যবস্থা করা হবে।’