• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২২  

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ ছাড়ের পরও সমাবেশের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তাপ। বিএনপির সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়েই যতসব জটিলতা। শর্তসাপেক্ষে দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু দলটির নেতারা সেটি মানতে নারাজ।

তাদের দাবি বিএনপির কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ করবে দলটি। জনগণের ভোগান্তি কমানো ও যানজট এড়াতে সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয় বিএনপিকে। তাদের সমাবেশকে নির্বিঘ্ন করতে ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখও দুদিন এগিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা অতীতে আর দেখা যায়নি। তবুও বিএনপি সমাবেশের স্থান নিয়ে নিজেদের অনড় রেখেছে। দলটির একতরফা দাবিই সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

অনুমোদনের পরও স্থান নিয়ে বিএনপির টালবাহানা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্থান নির্বাচনের মতো ছোট একটি ইস্যুকে সামনে রেখে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার বার্তাও দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত কয়েক বছরে আন্দোলন কর্মসূচিতে না থাকলেও দু’মাসে বিএনপি সারাদেশে সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। বড় কোনো সংঘর্ষ ও কোন্দল ছাড়াই এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অবশ্য সারাদেশের সমাবেশের সঙ্গে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও ১০ ডিসেম্বর নিয়ে সংশয়, সংঘাত এবং পাল্টাপাল্টি আলোচনা চলছে সাধারণ মানুষের মাঝেও।

জনগণ ছাড়াও কূটনীতিক মহলেও ১০ ডিসেম্বর উত্তাপ ছড়িয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ আর আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে চলবে না এমন হুমকিও শোনা গিয়েছিল বিএনপির নেতাদের মুখ থেকে। যদিও আস্তে আস্তে নিজেদের বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন তারা, তবুও সমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের শোডাউন দেখাতে চায় দলটি। কর্মীদের উদ্দীপ্ত করতে এর চেয়ে আর কোনো বড় সুযোগ নেই বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

আর সরকারি দল বলছে, বিএনপি যদি সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা করে তবে, তাদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও চাইছে বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হোক আর আওয়ামী লীগও চাইছে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতে। তবে কোনোভাবেই রাজধানী অশান্ত হোক সেটি এই মুহূর্তে চাইছে না সরকার। সরকারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা ইতোমধ্যেই নানা বক্তব্য রেখেছেন।
১০ ডিসেম্বর নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সমাবেশ ঘিরে আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতা করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তার সমুচিত জবাব দেবে। বিএনপি কেন তাদের সমাবেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে, এমন প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি কি জানে না বাংলাদেশের ইতিহাস? ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল-নক্সা বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরু হয়।

১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন এবং সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হককে পাক হানাদার বাহিনী ও  আলবদর বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যায়। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়। কাজেই সমাবেশের জন্য বিএনপি কেন ওই দিনটাই বেছে নিল এটাই এখন প্রশ্ন।
তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক স্থান, সেখানেই পাক হানাদার বাহিনী মুক্তি বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশাল জায়গা সেটা। আওয়ামী লীগের সব সমাবেশ ও জাতীয় সম্মেলন এখানেই  হয়। তাহলে বিএনপি কেন তাদের পার্টি অফিসের সামনে ছোট জায়গা বেছে নিল? পার্টি অফিসে সমাবেশ করার জন্য বিএনপির এত দৃঢ়তা কেন? এখানে তাদের কী কোনো বদ উদ্দেশ্য আছে? কোন মতলবে তারা এটা চায়?  
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি দুটি জায়গা চেয়েছিল।

আমরা তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। এখন তারা বলছে, নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চায়। সমাবেশকে ঘিরে অরাজকতা করার চেষ্টা করলে বিএনপি ভুল করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দর পরিবেশের জন্যই তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি দুটি জায়গার কথা বলেছে, সোহরাওয়ার্দী ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। তাদের দাবির প্রতি লক্ষ রেখেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর মানিক মিয়া এভিনিউতে রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগ নেই। কারণ সেখানে জাতীয় সংসদ রয়েছে।

বিএনপির আপত্তি উপেক্ষা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার কি ১০ তারিখ অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই অরাজক পরিস্থিতি যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে। ডিএমপি কমিশনারের কাছে তারা (বিএনপি) গিয়েছিলেন। তারা দুটি জায়গা চেয়েছিল। তারা অনেক মানুষের সমাগম করবে, তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মানিক মিয়া এভিনিউ চেয়েছে। সব দল ও বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হয়।
তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচির কারণে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মসূচি এগিয়ে এনে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় বলেছি, যে কোনো কার্যক্রম আপনারা করবেন। কারণ এটা আপনাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে কোনোক্রমেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া যাবে না।
বিএনপি চাইছে না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে। এক্ষেত্রে সরকারের বক্তব্য কি- জানতে চাইতে তিনি বলেন, তারাই এই স্থানগুলো চেয়েছে। আর নয়াপল্টন অনেক ব্যস্ততম সড়ক। ওই রাস্তায় যদি তারা সমাবেশ করে-যেহেতু তারা বলেছে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে, তাহলে কী হবে অবস্থাটা? এখন আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, তারা যদি আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে তাহলে তারা ভুল করবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের মাধ্যমে গ-গোল বাধাতে চায়। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার সৎ উদ্দেশ্যেই তাদের (বিএনপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেছে। যাতে তারা নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে পারে সেজন্য ৮ ডিসেম্বরের ছাত্রলীগের সম্মেলন এগিয়ে  এনে ৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে।

কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য তো একটি গ-গোল বাধানো। তিনি বলেন, সরকার তো গ-গোল বাধানোর জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য সারাদেশ থেকে অগ্নিসন্ত্রাসীদের জড়ো করে ঢাকা শহরে, রাজধানীতে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য অনুমতি দিতে পারে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করার স্বার্থে, শান্তি-স্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হয়। এক্ষেত্রেও তারা যদি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে, সে ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান সরকার ব্যক্ত করবে এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগও।
এরই মধ্যে ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট ও ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশের পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। ঢাকায় সমাবেশের পর ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে চায় দলটি।
১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ করতে গত মঙ্গলবার বিএনপিকে দেওয়া পুলিশের ২৬টি শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তেই বলা আছে এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আর পুলিশের শেষ বা ২৬ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে- জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
ডিএমপি থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলটি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ মূলত জনস্বার্থের সমাবেশ। এটি হারানো গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সমাবেশ। নয়াপল্টনেই বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে বলে জানান বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। আমরা নয়াপল্টনেই গণসমাবেশ করব। নয়াপল্টনে আগেও সমাবেশ হয়েছে এখনো হবে। এমনকি ভবিষ্যতেও নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশ করবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বিএনপি অনুমতি চেয়েছে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদি তারা না মানতে চায় সেটা তাদের ব্যাপার।