• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

বে টার্মিনাল প্রকল্পে গতি

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২৪  

গতি আসছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পে। এক দশক পর প্রকল্পের জন্য ভূমি বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। প্রায় ৫০১ একর খাসজমি প্রতীকী মূল্যে পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। পণ্য ও কনটেইনার ওঠানো-নামানোর এই টার্মিনালের জন্য তিন কোটি তিন টাকা সেলামি মূল্য জমা দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে তিনটি পৃথক চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো এই চিঠি বৃহস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝে পেয়েছে। জেলা প্রশাসন ৫০১ একর ভূমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বন্দোবস্ত দিতে সম্মতিপত্র পাঠিয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্য হিসেবে বন্দরের কাছে আলাদাভাবে দেয়া তিনটি চিঠিতে তিন কোটি তিন টাকা দাবি করেছে। জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত টাকা জমা দেওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দলিল হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের এই দলিল স্বাক্ষরিত হবে।

পতেঙ্গা সাগর উপকূলে বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য মোট ৮৭০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করে। আরও ৮০৩ একর ভূমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন তাদের অধিগ্রহণ করা এই জমির মূল্য নির্ধারণ করে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু বন্দর ভূমির জন্য বিপুল টাকা ব্যয় না করে প্রতীকী মূল্যে সেটি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় জেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিল।

দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর পান্না আক্তারের গত ৩০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত তিনটি চিঠিতে নগরীর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় মোট ৫০১ একর জমি বন্দোবস্তের জন্য প্রতীকী হিসেবে এক কোটি এক টাকা করে মোট তিন কোটি তিন টাকা সেলামি মূল্য জমা দেয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায়। অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ১৯৯৫ অনুযায়ী সরকার শর্তসাপেক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণের জন্য এ জমি দীর্ঘমেয়াদে বন্দোবস্ত দেয়ার অনুমতি দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, সরকার ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু অধিগ্রহণের খরচ বাবদ জেলা প্রশাসনের দাবি করা অর্থ নিয়ে জটিলতা ছিল। শেষপর্যন্ত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের মধ্যস্থতায় জেলা প্রশাসন প্রতীকী মূল্যে ভূমি বরাদ্দে সম্মত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০১ একজন ভূমি বরাদ্দের জন্য তিনটি পৃথক ডিমান্ড নোট পাঠিয়েছে। ভূমি বন্দোবস্ত বাবদ টাকা জমা দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী আরও ৩০২ একর ভূমি বরাদ্দের প্রক্রিয়াও চলছে।

আমদানি-রপ্তানি বাড়তে থাকায় এক দশক আগে পতেঙ্গার সাগরপাড়ে ৮৭০ একর জমিতে বে টার্মিনালে নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জমি বরাদ্দ পেতে ২০১৪ সালের মে মাসে প্রক্রিয়া শুরু করে তারা। প্রথম দফায় ২০১৭ সালে ব্যক্তিমালিকানাধীন ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে বন্দরকে বরাদ্দ দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। প্রায় ১০ বছর পর এখন আরও ৫০১ একর জমি বুঝে পাচ্ছে বন্দর। এখন পর্যন্ত ৫৬৭ একর জমি হাতে পাচ্ছে বন্দর। তবে আরও প্রায় ৩০০ একরের মতো জমি এখনো বুঝে পায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ব্যবসায়ীরা বে টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। নতুন এই প্রকল্পে বন্দরের সেবা বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়বে। সেখানে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বড় জাহাজ ভিড়ানো যাবে। কনটেইনার ও পণ্য খালাস করে শহরে না ঢুকেই দেশের নানা স্থানে নেওয়া যাবে। বন্দর ব্যবহারের খরচ কমবে এই আশায় ব্যবসায়ীরা বে টার্মিনাল প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে গত ১০ বছরে এই প্রকল্পের খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। চলতি ২০২৪ সালে এই টার্মিনাল চালুর আশা করা হয়েছিল। তবে মাঠপর্যায়ে কাজ হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের নৌসীমার শেষ প্রান্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনের সাগরপাড় থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্প এলাকা। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে এবং এর পরিকল্পনাও চূড়ান্ত হয়েছে। তবে প্রকল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রায় চূড়ান্ত হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি।

বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। আবুধাবি পোর্টস আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হতে পারে। এ ছাড়া নৌপথ তৈরিতে ৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের পাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ইস্ট কোস্ট গ্রুপ ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগে তেল ও গ্যাসের টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।

বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভিড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।

সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে এখন দেশের তিনটি বন্দর ব্যবহৃত হচ্ছে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা-এই তিন বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন হয় প্রায় ৮৭ শতাংশ। সরকার এখন এই বন্দর ঘিরে নতুন তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ শেষে এখন চালুর অপেক্ষায় আছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। শুধু পিছিয়ে আছে বে টার্মিনাল প্রকল্প।