• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের পটুয়াখালী
ব্রেকিং:
চাকরির পেছনে না ছুটে যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান ‘সামান্য কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না’ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর জন্ম

আজকের পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

 


যে কবিতা ভালোবাসে-না বা কবিতা শোনার মানসিকতা যার নেই, তাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন কবি। কবির এই সাহস অদম্য।  তিনি বলেছেন-

‘যে কবিতা শুনতে জানে না

সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

যে কবিতা শুনতে জানে না

সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।’

কত সহজ-সাবলীল ভাষায়, কবিতাবিমূখদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন কবি। কত গভীরের অনুভূতি দিয়ে তিনি প্রকাশ করে গেছেন এমনি অসংখ্য অনবদ্য কাব্যসৃজন। পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন তিনি, বলতেন কবি ও কবিতার কথা। তিনি আর কেউ নন, তিনি কিংবদন্তির কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তার কাব্যসৃজন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে অনবদ্য সংযোজন।

বাংলা সাহিত্যের মৌলিক কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তার দুটি কবিতা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব। আজ অনন্য এ কবির ১৭তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্যের মৌলিক এই কবি ২০০১ সালের ১৯ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন।

কিংবদন্তির কথা বলা এই নন্দিত কবির জন্ম ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার বাবুবগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর গ্রামে। তার পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। ডাক নাম সেন্টু৷ 

তার পিতা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর সাত ভাই পাঁচ বোন। তারা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনে পরিচিত নাম। ভাইদের মাঝে রয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক 'হলিডে' সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক সাদেক খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মাহীদুল্লাহ খান বাদল। তার বোন বেগম সেলিমা রহমান সাবেক মন্ত্রী। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করে ১৯৫৪ সালে একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। 

১৯৫৭ সালে অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ১৯৮২ সালে তিনি সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেন। 

দেশে এবং বিদেশে রাষ্ট্রীয় এসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবেই সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বিয়ে করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। স্ত্রীর নাম মাহজাবীন খান। এই দম্পতির দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ‘৫২ ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে, মিছিলে, মিটিং-এ তার উপস্থিতি ছিল সরব। ‘৫২-র সেই মিছিল, পুলিশের গুলিবর্ষণ, শহিদ হওয়া ছাত্রদের লাশ তার মনে গভীর বেদনার সৃষ্টি করেছিল। সেই বেদনা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছিল তার বিখ্যাত কবিতা ‘কোন এক মাকে’। বাংলাদেশের সমস্ত প্রান্তকে উন্মাতাল করে দেওয়া একুশের ভিন্নতর এক ব্যঞ্জনা প্রকাশিত হয়েছিল ‘কোনো এক মাকে’ কবিতায়। 

কিংবদন্তির কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ পঞ্চাশ দশকে বেড়ে উঠা আধুনিক কবিদের মধ্যে ছিলেন অগ্রগণ্য। তার কাব্যিক আঙ্গিক ও শব্দ ব্যবহারে স্বতন্ত্রতা রয়েছে। ভাষা আন্দোলন ছিল তার কাব্য রচনার মূল প্রেরণা। পঞ্চাশের দশকে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ প্রধানত ছড়া লিখতেন। এই সময়ে তিনি কিছু বিদেশি কবিতারও অনুবাদ করেছেন। বেশ কয়েক বছর ছড়ায় নিজেকে প্রকাশ করার পর তিনি কবিতার মূলধারায় কাজ করতে শুরু করেন। 

কাব্যের আঙ্গিক গঠনে এবং শব্দ যোজনার বৈশিষ্ট্য কৌশল তার কবিতায় স্বাতন্ত্র্য চিহ্ন ব্যবহার করে। তিনি লোকজ ঐতিহ্য ব্যবহার করে ছড়ার আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। শব্দকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে সাজিয়ে কবিতা লেখায় আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ঢঙ। প্রকৃতি রূপ ও রঙের বিচিত্রিত ছবিগুলো তার কবিতাকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে। 

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো সাতনরী হার, কখনো রং কখনো সুর, কমলের চোখ, আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা, প্রেমের কবিতা, বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা, আমার সময়, নির্বাচিত কবিতা ইত্যাদি। 

সাহিত্যকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরষ্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার কর্মসৃজনের উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৮৫ সালে একুশে পদক-এ ভূষিত হন৷